ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে মমতা হতে পারেন মোদির বিকল্প, তবে তাঁর লক্ষ্য এখন করোনা ঠেকানো

যাজ্ঞসেনী চক্রবর্তী
2021.05.05
কলকাতা
ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে মমতা হতে পারেন মোদির বিকল্প, তবে তাঁর লক্ষ্য এখন করোনা ঠেকানো কলকাতায় ভারতের বিরোধীদলগুলোর সমন্বয়ে ‘ইউনাইটেড ইন্ডিয়া’ সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ১৯ জানুয়ারি ২০১৯।
[রয়টার্স]

পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল জয়ের ফলে কি আগামীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিপক্ষে জোট বাঁধার চেষ্টা চালাবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? ভারতীয় রাজনীতিতে আপাতত এই প্রশ্নই সর্বাধিক আলোচিত। 

“জাতীয় পর্যায়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখন ইউপিএ’র বিকল্প,” এক টুইটে লেখেন রাজনীতি বিশ্লেষক সঞ্জয় ঝা।

২০০৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের পরবর্তী সময়ে বাম ও মধ্যপন্থী দলগুলোর মোর্চা হিসেবে গঠিত হয় ইউপিএ বা ইউনাইটেড প্রগ্রেসিভ অ্যালায়েন্স, যার মধ্যে রয়েছে ভারতের অন্যতম বৃহত্তম রাজনৈতিক দল জাতীয় কংগ্রেসও। 

মমতা “শুধু বিজেপির বিশাল অগ্রযাত্রা থামিয়েই দেননি, বরং পেছনেও ঠেলে দিয়েছেন,” বলেন সঞ্জয় ঝা। 

আসন্ন ২০২৪ সালে ভারতের সাধারণ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ও এর নেতা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে মোকাবেলায় মমতার সম্ভাবনার পক্ষে অধিকাংশ রাজনীতি বিশেষজ্ঞ মত দিলেও মমতা এখনই দিল্লীর ক্ষমতা দখলের লড়াই শুরু করবেন না বলেই তাঁদের ধারণা। 

তাঁদের মতে রাজ্যে করোনা মহামারি ঠেকানোতেই এখন মনোযোগ দেবেন তিনি। 

বর্তমানে ভারতে একমাত্র নারী মুখ্যমন্ত্রী মমতা তৃতীয় মেয়াদের জন্য বুধবার শপথ গ্রহণ করেছেন। এই নিয়ে ২০১১ সাল থেকে পরপর তিনবার মুখ্যমন্ত্রী হলেন তিনি। নির্বাচনে তাঁর নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস পশ্চিমবঙ্গের ২৯৪ আসনের বিধানসভায় ২১৫টিতে জিতে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে। 

অপরদিকে তৃণমূলের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী, মোদির বিজেপি জিতেছে ৭৭টি আসন। দুটি আসনে ভোট স্থগিত রয়েছে। 

শপথ নেবার পরই বুধবার মোদিকে দেওয়া এক চিঠিতে মমতা লিখেছেন, করোনাভাইরাস পরিস্থিতির মোকাবিলায় রাজ্যগুলোকে যথাসময়ে এবং যথেষ্ট পরিমাণে সহায়তা করছে না কেন্দ্র। 

“এই মুহূর্তে মমতার সম্পূর্ণ নজর করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলার দিকে,” বেনারকে বলেন রাজনীতি বিশেষজ্ঞ ও বর্ষীয়ান সাংবাদিক জয়ন্ত ঘোষাল। 

তাঁর মতে, জাতীয় রাজনীতি সম্পর্কে “যথেষ্ট ওয়াকিবহাল” ভারতের সাবেক রেলমন্ত্রী মমতা “দেশের এই ভয়াবহ করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে” দিল্লির “ক্ষমতার লড়াইয়ে নামবেন না।” 

তবে “করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবেলায় মোদি সরকারের চূড়ান্ত ব্যর্থতার সুযোগ নিয়ে বিজেপি-শাসিত কেন্দ্র সরকারের বিরুদ্ধে জোট গড়ে তুলতে পারেন মমতা,” বলেন জয়ন্ত ঘোষাল। 

তিনি বলেন, মমতার বরং চেষ্টা হবে, প্রতিটি অ-বিজেপি রাজ্যের হয়ে মোদির ওপর চাপ সৃষ্টি করা, যাতে তিনি প্রধান মোদি-বিরোধী মুখ হয়ে ওঠেন। 

“মমতার জয় এটুকু নিশ্চিত করেছে যে, তিনি বিজেপি-বিরোধী অভিযানের নেতৃত্ব দিতে অবশ্যই সক্ষম হবেন,” বেনারকে বলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সমর্থক এবং বিজেপি-বিরোধী রাষ্ট্রীয় জনতা দলের সাংসদ মনোজকুমার ঝা। 

এবার পশ্চিমবঙ্গ নির্বাচনে বিজেপির ২০০ আসনের লক্ষ্যের বিপরীতে মাত্র ৭৭টি আসন পাওয়ার বিষয়টি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, “২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে আর কোনো রাজ্য নির্বাচনে এত বিপুল ব্যবধানে হারেনি তারা (বিজেপি)। তাদের এই পরাজয়ের কৃতিত্ব অবশ্যই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।”

যদিও মমতা ২০২৪ সালে প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হবেন কিনা, সে সম্পর্কে এখনই নিশ্চিত নন তিনি।

মনোযোগ করোনা মোকাবেলা 

জাতীয় রাজনীতিতে মমতার আগ্রহের কিছু ইঙ্গিত পাওয়া যায় নির্বাচনী ফলাফল ঘোষণার পর থেকেই। বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচারিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে মমতা মোদির কাছে তাঁর দাবি সংবলিত তালিকা তুলে ধরেন। 

এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো; ভারতের প্রত্যেক নাগরিকের জন্য বিনামূল্যে টিকার ব্যবস্থা এবং প্রতি রাজ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেন ও ওষুধ সরবরাহ করা। 

ভ্যাকসিনের অপর্যাপ্ততার কারণে পশ্চিমবঙ্গে আপাতত করোনার টিকাদান বন্ধ রয়েছে। মোদিকে লেখা ওই চিঠিতে মমতা বলেছেন, দেশের বাকি রাজ্যগুলোতেও পর্যাপ্ত ভ্যাকসিন নেই, ফলে কেন্দ্রের নির্দেশ অনুযায়ী দেশের সমস্ত প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিককে টিকা দেওয়ার ‘অবাস্তব লক্ষ্যমাত্রা’ মানা সম্ভব নয়। 

করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে জর্জরিত ভারত এবং মোদি সরকারের বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ, এই ঢেউ সম্পর্কে আগাম সতর্কবার্তা থাকা সত্ত্বেও যথাসময়ে পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। 

নির্বাচনী প্রচার চলাকালে একাধিক জনসভায় মমতা অভিযোগ করেন, অ-বিজেপি রাজ্যগুলোর প্রতি বৈষম্য করছে কেন্দ্র এবং টাকার বিনিময়েও যথেষ্ট পরিমাণ টিকা সরবরাহ করছে না। 

তাঁর এই অভিযোগ সমর্থন করেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার অফ সোশ্যাল মেডিসিন অ্যান্ড কমিউনিটি হেলথ-এর প্রাক্তন অধ্যাপক মোহন রাও মনে করেন, ভারতে টিকা নিয়ে ভীষণভাবে রাজনীতি চলছে। 

“তথ্য ঘাঁটলেই দেখা যাচ্ছে, অধিকাংশ অ-বিজেপি রাজ্যেই টিকা সরবরাহে যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে,” গত মাসে বেনারকে বলেন এই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ। 

সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ভারতে সক্রিয় করোনা রোগীর সংখ্যা প্রায় ৩৫ লাখ, বুধবার নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন ৪০ হাজারের বেশি। 

ভারত সরকারের নিজস্ব কোভিড ওয়েবসাইটে দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, দেশে এখন পর্যন্ত মোট মৃতের সংখ্যা ৩ লাখ ৩৮ হাজার ৪৩৯, যাঁদের মধ্যে বুধবার মৃত্যু হয়েছে ৩ হাজার ৭৮০ জনের।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।