জুলহাজ হত্যায় এবিটি সদস্য গ্রেপ্তার বান্দরবানে বৌদ্ধভিক্ষুককে জবাই

ঢাকা থেকে শাহরিয়ার শরীফ
2016.05.15
Share on WhatsApp
Share on WhatsApp
160515-BD-Shihab-1000 জুলহাজ ও তনয় হত্যা মামলায় আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য শরিফুল ইসলাম শিহাবকে কুষ্টিয়া থেকে গ্রেপ্তার করে ঢাকায় এনে গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে হাজির করা হয়। মে ১৫, ২০১৬।
এএফপি

সমকামীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা জুলহাজ মান্নান ও মাহবুব রাব্বী তনয় হত্যা মামলায় আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) সন্দেহভাজন সদস্য শরিফুল ইসলাম ওরফে শিহাবকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত।
পুলিশের সন্ত্রাসবিরোধী ইউনিটের সদস্যরা রোববার ভোরে দেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলা কুষ্টিয়া থেকে শিহাবকে গ্রেপ্তার করে। পরে সংবাদ সম্মেলন করে সন্ত্রাসবিরোধী ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ সম্পর্কিত তথ্য অবহিত করেন।

পুলিশের ভাষ্য হচ্ছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জুলহাজ–তনয় হত্যায় শিহাবের সম্পৃক্ততা মিলেছে।ওই জোড়া খুনের আগে প্রায় দুই মাস ধরে সে এবং তার সঙ্গীরা প্রস্তুতি নেওয়ার কথা বলেছে।

“শিহাব হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। হত্যার পর ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা দুটি অস্ত্রের একটি তার নিজের বলেও জানিয়েছে। আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের একাধিক অপারেশনে সে বিভিন্নভাবে যুক্ত থাকার কথা জানিয়েছে,” জানান মনিরুল।

গত ২৫ এপ্রিল ঢাকার কলাবাগানে বাড়িতে ঢুকে জুলহাজ ও তার বন্ধু তনয়কে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যার পর আনসার আল ইসলাম দায় স্বীকার করে।

ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা ইউএসএআইডির কর্মসূচি কর্মকর্তা জুলহাজ মান্নান (৩৫) সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সরকারি দল আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মনির খালাতো ভাই। তিনি সমকামীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার সাময়িকী ‘রূপবান’ সম্পাদনা করতেন।

এ ঘটনার পর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি টেলিফোনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এই হত্যার বিচার করার অনুরোধ জানান। গত ৪ মে তিনদিনের ঢাকা সফরে এসে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া-বিষয়ক সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল বলেন, জুলহাজ মান্নানের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের তদন্তের চূড়ান্ত পরিণতি দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র । তখন সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে তাঁকে আশ্বস্ত করা হয়েছিল।

পুলিশের গণমাধ্যম কার্যালয়ে গতকাল অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, “২০১৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে শিহাব আনসারুল্লাহ বাংলা টিমে যোগ দেয় এবং কুষ্টিয়া এলাকায় কাজ শুরু করে। সেখানে সংগঠনের একটি ইউনিট তার নেতৃত্বে পরিচালনার হতো।”

গোয়েন্দা পুলিশ রোববার দুপুরে শিহাবকে আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দশ দিনের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন করেন। শুনানি শেষে অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম কায়সারুল ইসলাম তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

পুলিশের রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, শিহাব আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য। ওই ঘটনায় আর কারা জড়িত তা জানতে তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।

“শিহাব একসময় হরকাতুল জিহাদের সদস্য হিসেবে সিলেট এলাকায় কাজ করত। সে সময় মুফতি হান্নানের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল। এ ছাড়া আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক রয়েছে,” বেনারকে জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার (মিডিয়া) মারুফ হোসেন সরদার।

বান্দরবানে বৌদ্ধভিক্ষু হত্যা

বান্দরবানে নাইক্ষ্যংছড়িতে উপজেলার চাকপাড়ায় গত শনিবার রাতে বৃদ্ধ বৌদ্ধ ভিক্ষু ধাম্মা ওয়াসাকে (৭৪)  কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় রবিবার পর্যন্ত কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। গত কয়েক মাসে কুপিয়ে ও জবাই করে হত্যার ধারাবাহিকতায় এই প্রথম একজন বৌদ্ধ ভিক্ষুকে হত্যা করা হলো।

এর আগে ৬ মে রাজশাহীর তানোর উপজেলায় একটি আমবাগান থেকে শহীদুল্লাহ (৬৫) নামে স্থানীয় একজন পীরের গলা কাটা লাশ উদ্ধার করা হয়।একই জেলায় গত ২৩ এপ্রিল গলা কেটে হত্যা করা হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এ এফ এম রেজাউল করিমকে।

কে বা কারা তাঁকে হত্যা করেছে, পুলিশ তা নিশ্চিত না হলেও জঙ্গি সম্পৃক্ততার বিষয়টি উড়িয়ে দিচ্ছে না।

বৌদ্ধ ভিক্ষুর পরিবারের সদস্যরা বলছেন, দুদিন আগে বিহারে অজ্ঞাতনামা দুই ব্যক্তিকে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করতে দেখা গেছে। বৌদ্ধভিক্ষু বিষয়টি পরিবারের সদস্যদের জানিয়েছিলেন।

গত শনিবার দুপুরে এ হত্যার ঘটনাকে ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘এর সঙ্গে স্বজনেরা জড়িত।’

এর প্রতিবাদে গতকাল রোববার বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পদত্যাগ এবং তাঁর মন্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়। ‘বাংলাদেশ সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভা’ আয়োজিত ওই কর্মসূচি থেকে বৌদ্ধ ভিক্ষু হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করা হয়।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা সদর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে এই বৌদ্ধ বিহার অবস্থিত। ধাম্মা ওয়াসার পুত্রবধূ মানুচিং চাক স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান, ভোরে তিনি ছোয়েং (ভিক্ষুদের খাবারকে ছোয়েং বলে) দিতে গিয়ে দেখেন বিহারের দরজা খোলা। ভেতরে গিয়ে শ্বশুরকে নিথর অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন।

তাকে হত্যা করা হলেও বিহারের টাকা ও অন্যান্য কোনো কিছু হত্যাকারীরা নেয়নি।

পুলিশের বাইশারি তদন্ত কেন্দ্রের প্রধান ও মামলা তদন্ত কর্মকর্তা আনিসুর রহমান স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেছেন, চাপাতি অথবা ধারালো দা দিয়ে আঘাত করা হয়েছে।সাম্প্রতিক সময়ে দেশের অন্যান্য এলাকায় যেভাবে হত্যার ঘটনা ঘটেছে, আঘাতের ধরন অনেকটা সেরকম বলে মনে হয়েছে।

“বৌদ্ধ ভিক্ষু খুনের ঘটনার দায় সরকার এড়াতে পারে না। বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্‌ঘাটন করতে হবে,” বেনারকে জানান বাংলাদেশ সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভার ধর্মীয় সম্পাদক সুমঙ্গল মহাথের।

তিনি জানান, শান্তিপ্রিয় বৌদ্ধ ভিক্ষুর খুনের ঘটনাকে নিয়ে নাটক সাজানো হলে তা বৌদ্ধ সম্প্রদায় মেনে নেবে না।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।