বাংলাদেশেও মিলেছে জিকার অস্তিত্ব
2016.03.22
আফ্রিকা, আমেরিকায় তোলপাড়ের পর এবার বাংলাদেশেও মিলেছে জিকা ভাইরাসের অস্তিত্ব। সম্প্রতি দেশের বন্দর নগরী চট্টগ্রামে জিকা আক্রান্ত ৬৭ বছরের এক ব্যক্তিকে শনাক্ত করেছে সরকার। তিনিই দেশের জিকা আক্রান্ত প্রথম ব্যক্তি।
মঙ্গলবার সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসে। ডেঙ্গু প্রতিরোধের প্রস্তুতি বিষয়ক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক। সংবাদ সম্মেলনে জিকা প্রতিরোধে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগ এবং ঝুঁকির বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়।
যেভাবে বাংলাদেশে জিকা শনাক্ত
সম্প্রতি জিকা ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে বিশ্বময় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তখন বাংলাদেশে জিকার অস্তিত্ব নেই বলে সরকার ঘোষণা দিলেও আইইডিসিআর-এর সংরক্ষণ করা রক্তের নমুনা ফের পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। আর সেখানেই পাওয়া যায় জিকার ভাইরাসের অস্তিত্ব।
এর আগে দেশে এডিস এজিপ্টি নামক মশায় ডেঙ্গু ও চিকনগুনিয়ার ভাইরাস আছে কিনা তা পরীক্ষা করা হয়েছিল। এর জন্য ঢাকার দুটি এলাকা এবং চট্টগ্রাম ও খুলনা থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। ওই একই প্রজাতির মশা জিকা ভাইরাসের জীবানুও বহন করে।
সে সময় ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে পাঠানো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করেন। তখনই ডেঙ্গু থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা এক ব্যক্তির রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে বিশেষজ্ঞ দলটি। যিনি এক বছর আগে চিকিৎসার মাধ্যমে ডেঙ্গুজ্বর থেকে সুস্থ হয়ে ওঠেন। জিকা সম্পর্কে সচেতনতা না থাকায় তখন এ ভাইরাসের পরীক্ষা করানো হয়নি।
বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো বিশেষজ্ঞ দল মোট ১০৭০ জনের রক্তের নমুনা গ্রহণ করে। তবে তার মধ্যে দৈব চয়ন পদ্ধতিতে নির্বাচিত ১০১ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। ওই ১০১ জনের নমুনার মধ্যে শুধুমাত্র চট্টগ্রামের ওই বৃদ্ধের রক্তে জিকা ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। আরও নিশ্চিত হতে পরবর্তীতে সংগৃহীত নমুনা গত ১৩ মার্চ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছে পাঠানো হয়।
“বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জিকা ভাইরাস নিশ্চিত করার পর দেশে জিকা ভাইরাসের অস্তিত্ব সম্পর্কে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হলো। তবে সংগৃহীত অন্য কোন নমুনায় এ ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। এমনকি অস্বাভাবিক আকৃতির মাথা নিয়ে শিশু জন্মের কোনো তথ্যও এই সময়ের মধ্যে আমরা পাইনি।” বেনারকে বলেন জাতীয় রোগ পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা আইইডিসিআর’র অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান।
তবে কীভাবে বাংলাদেশে জিকা ভাইরাসের সংক্রমণ সে বিষয়টি নির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি এই বিশেষজ্ঞ।
তিনি বলেন, “হয়তো বিদেশ ভ্রমণে গিয়ে কেউ আক্রান্ত হয়েছিলেন। কিন্তু এখন তা খুঁজে বের করা সম্ভব না।”
আতঙ্ক নয়, মশা নিয়ন্ত্রণ জরুরি
বাংলাদেশে প্রথমবারের মত জিকা শনাক্ত হলেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিষয়টি নিয়ে শঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। এ ভাইরাস ঠেকাতে প্রয়োজন মশা নিয়ন্ত্রণ।
এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. দীন মোহাম্মদ নুরুল হক বেনারকে বলেন, জিকা কোনো প্রাণঘাতী ভাইরাস নয়। মশার মাধ্যমে মানুষের শরীরে জিকা ছড়ায়। জিকা ভাইরাস আক্রান্ত হলে শরীরে নানা ধরনের উপসর্গ লক্ষ্য করা যায়। কোনো গর্ভবতী মাকে জিকা ভাইরাসযুক্ত মশা কামড়ালে গর্ভের শিশুর অপরিপক্ব মস্তিষ্ক নিয়ে জন্মানোর ঝুঁকি থাকে। তাই গর্ভবতীদের ক্ষেত্রে বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। প্রতিটি বাড়ি থেকে মশা নিয়ন্ত্রণের কাজ করতে হবে।
সতর্ক সরকার
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সক্ষমতার মতোই জিকার বিষয়েও সতর্ক রয়েছে সরকার। এ ছাড়া মশা নিয়ন্ত্রণেও দেশজুড়ে নানা ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে বলেও সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, “বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জিকা ভাইরাস সম্পর্কে সকল দেশকে সতর্ক রাখতে উদ্যোগ নিয়েছে। বাংলাদেশও জিকা প্রতিরোধে প্রস্তুত। জিকার বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি প্রতিরোধেও সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে প্রাক মৌসুম ও বর্ষা মৌসুম পরবর্তী সময়ে মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম জোরদার, ডেঙ্গু রোগ নির্ণয়ে র্যাপিড ডায়াগনস্টিক টুল সংগ্রহ ও সকল জেলায় তরুণদের নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।”
মশা নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী শফিউল আলম বেনারকে বলেন, “এত দিন বাংলাদেশে জিকার অস্তিত্ব সম্পর্কে জানা যায়নি। তবে মশাবাহিত যেকোনো রোগ প্রতিরোধে সরকার সব সময় সচেষ্ট ছিল। সেই ধারাবাহিকতায় আগামী এপ্রিল থেকে মশা নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশনের নিয়মিত কার্যক্রম শুরু হবে।”